শেয়ার বাজারে অপশন ট্রেডিং এর 6 টি আসল সত্য যা কেউ বলে না :

শেয়ার বাজারে যদি আপনি নতুন হয়ে থাকেন বা অপশন ট্রেডিং শিখে শুরু করার কথা ভাবেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি কোনও জায়গা থেকে শুনেছেন যে অনেকে রোজ লাখ টাকা ইনকাম করে।

কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি না এর আসল সত্যিটা আজকে আপনি জানতে পারবেন। যদি আপনি শেয়ার বাজারের নতুন হয়ে থাকেন আর অপশন ট্রেডিং শিখে শুরু করার কথা ভাবছেন তাহলে এই 6 টি আসল সত্যি আপনার জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন।

শেয়ার বাজার ও অপশন ট্রেডিং :

২০২০ সালে আসা Covid 19 আসার পর অনেকেরই শেয়ার বাজারের ওপর উৎসাহ বাড়তে থাকে। অনেকেই মনে করে ঘরে বসে মোটা টাকা ইনকাম করার অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে এই স্টক মার্কেট। দুই মাধ্যমে স্টক মার্কেটে ইনকাম করা যায়, প্রথমত ইনভেস্টিং বা বিনিয়োগ আর দ্বিতীয় ট্রেডিং নতুন প্রজন্মের ট্রেডিং নিয়েই আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

শেয়ার বাজারের ট্রেডিং অনেক রকমের হয় যেমন স্টক ট্রেডিং, কারেন্সি ট্রেডিং, অপশন ট্রেডিং ইত্যাদি তার মধ্যে সবথেকে কমপ্লিকেটেড ও ঝুঁকিপূর্ণ সেগমেন্ট হল Future & Option এ ট্রেড করা। কিন্তু আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে শুরু করার আগে এই বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন।

1. SEBI এর ডেটা কি বলছে :

সব থেকে প্রথম কথা হচ্ছে যা আপনাদের বোঝানো হয় যদি আপনি অপশন ট্রেডিংয়ে চলে আসেন তাহলে আপনি প্রতিদিন পাঁচ হাজার দশ হাজার ইনকাম করতে পারবেন। কিছু এমন লোক আছে যারা নাকি প্রতিদিন লাখ টাকা বা কোটি টাকাও ইনকাম করে এরকম প্রফিট এর স্ক্রিনশট ও instagram ad আপনি হয়তো প্রায়ই দেখতে পান আপনাকে এমন ভাবে বোঝানো হয় যেন ট্রেডিং একটা দ্রুত টাকা ইনকাম এর উপায়।

শেয়ার বাজারে অপশন ট্রেডিং

কিন্তু এটি অনেক বড় একটি মিথ্যা কারণ SEBI এর ডেটা অনুসারে মাত্র ১১% লোক ট্রেডিং করে ইনকাম করছে আর বাকি ৮৯% লোক নিজেদের ক্যাপিটাল লুজ করছে। তার আসল কারণ অনেকেই মনে করে যে ট্রেডিং হল দ্রুত ধনী হওয়ার স্কীম কিন্তু আসলে তা নয়। খুব অল্প সংখ্যক ট্রেডাররা ডিসিপ্লিন ও পেসেন্স রেখে ট্রেড করে ভালো রিটার্ন জেনারেট করতে পারে।

আরো ভালোভাবে বিষয়টি জানতে হলে SEBI এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে ভিজিট করে যাচাই করতে পারেন।

2. সঠিক রিটার্ন এক্সপেকটেশন কত হওয়া উচিত :

শেয়ার বাজারে যারা নতুন তারা মনে করে দশ হাজার টাকা দিয়ে লাখ টাকার প্রফিট করবে কিন্তু একবার ভেবে দেখুন এটা যদি সম্ভব হতো তাহলে তো সবাই ধনী হয়ে যেত। আসলে ট্রেডিং এ আপনার প্রফিট এক্সপেক্টেশন হওয়া উচিত প্রতিদিন ২ থেকে ৩ % শুরু শুরুতে যদি আপনি এটা কন্টিনিউ এই রিটার্ন টা এচিভ করতে থাকেন তাহলে সেটা অনেক বড় একটি বিষয়। অপশন ট্রেডিং থেকে রেগুলার যদি আপনি ইনকাম করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার সঠিক রিটার্ন এক্সপেকটেশনের টার্গেট সেট করা প্রয়োজন।

3. কোনও স্ট্র্যাটেজি ১০০% কাজ করে না :

এই বিষয়টি জানা খুবই প্রয়োজনীয় যখন আপনি নতুন নতুন ট্রেডিং করা শুরু করবেন তখন আপনার মনে হবে বেশ কিছু স্ট্রাটেজি শিখে রাখা জরুরি। আপনি ক্যান্ডেল স্টিক প্যাটার্ন শেখা শুরু করবেন চার্ট প্যাটার্ন শেখা শুরু করবেন। সাপোর্ট আর রেজিস্ট্যান্ট শেখা শুরু করবেন এবং এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু ট্রেডিং এর স্ট্রাটেজিও শিখে নেবেন। তখন আপনার মনে হবে এবার তো আমি শিখেই নিয়েছি এবার আমাকে প্রতিদিন লাখ টাকা ইনকাম করা থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা।

তারপর আপনি যেই স্ট্র্যাটেজি শিখেছেন সেটা মার্কেটে গিয়ে এপ্লাই করার চেষ্টা করবেন। হতে পারে স্ট্যাটাজি একবার কাজ করল আপনি প্রফিট করলেন দ্বিতীয়বারও কাজ করল আপনি প্রফিট করলেন। কিন্তু এখানে আপনার একটা কথা জানা খুবই প্রয়োজন কোন এমন স্ট্রাটেজি তৈরি হয়নি যা ১০০% টাইম কাজ করবে আর সব ধরনের মার্কেটে কাজ করবে কিছু স্ট্রাটেজি হয়তো Trending মার্কেটে কাজ করবে কিছু স্ট্র্যাটেজি রয়েছে যা হয়তো মার্কেটের জন্য কাজ করবে। তাই সব থেকে ভালো কোন স্ট্র্যাটেজি ডাইরেক্ট মার্কেটে এপ্লাই করার আগে তা নিয়ে পেপার ট্রেড করা বা ব্যাকটেস্ট করা।

মার্কেটের যত স্ট্রাটেজি রয়েছে তার বেশিরভাগই ৫০ বা ৬০% টাইমেই কাজ করবে আর এটাই বাস্তব।

4. অপশন ট্রেডিং এর Paid Call Tips :

শেয়ার বাজারে নতুন আসা বেশিরভাগ ট্রেডারের সবথেকে বড় ভুলের মধ্যে একটি হলো Paid Call Paid Tips ও বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপের ফাঁদে পা দেওয়া।

তারা এমন কাউকে খোঁজার চেষ্টা করে যারা গাইড করবে কোথায় Buy করতে হবে কোথায় Sell করতে হবে আর এরকম লোক তারা পেয়েও যায় যারা বলে আপনি শুধু পাঁচ হাজার দিন আমি গাইড করে দেবো কোথায় Buy করতে হবে কোথায় সেল করতে হবে। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের ফেক প্রফিট স্ক্রিনশট আপনাদের দেখিয়ে আপনাদের ভরসা জিতে যায় আর আপনারাও তাদেরকে ভরসা করা শুরু করেন কিন্তু ওরা সেটারই ফায়দা তুলে আপনাকে লুটে নেওয়ার চেষ্টা করে।

তাই স্টক মার্কেটে আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে যথা সম্ভব এই ধরনের Scam থেকে দূরে থাকুন।

5. রিভেঞ্জ ট্রেডিং এর ট্র্যাপ :

যখন কোনও নতুন ট্রেডার মার্কেটে আসে তখন তারা লস হওয়ার পরে ভাবে আরো বেশি ক্যাপিটাল লাগাবো যা লস হয়েছে সেটাকে রিকভার করে নেব তখন তারা যে সেভিং করে রেখেছিল সেটাকে ও ট্রেডিংয়ে লাগিয়ে দেয়। এখানে যেমন প্রফিট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে লস আরো হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে ঠিক এইভাবে রিভেঞ্জ ট্রেডিং এর ফাঁদে পা দিয়ে তারা অনেক বড় লস খেয়ে সারা জীবনের জন্য মার্কেট থেকে আউট হয়ে যায়।

6. শেয়ার বাজারে ১০০% Predict করা অসম্ভব :

বাজারে আসা নতুন রিটেল ট্রেডাররা লস জিনিসটা দেখতে পছন্দ করেনা তারা চায় সব সময় এই প্রফিট হবে। তাই তারা কোন ট্রেডে যদি লস হয় তাহলে সেখান থেকে অল্প লস বুক করে বেরিয়ে যেতে চায় না। তাই শেয়ারবাজারে অপশন ট্রেডিং এ যদি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডিসিপ্লন ও ধৈর্য রাখতে হবে।

ডিসিপ্লিন এর কথা বলতে গেলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা সেটা হল আপনার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কারণ একটি ট্রেডে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল স্টপ লস ব্যবহার করা। বেশিরভাগ নতুন ট্রেডাররা এটা করতে পারে না এই কারণে তারা লস খেয়ে অল্প দিনে মার্কেট থেকে আউট হয়ে যায়।

(বি.দ্র: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। তাই সূচকের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ কম বা বেশি হতে পারে। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগে লাভের কোনও গ্যারান্টি থাকে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগ করুন।)

Leave a Comment