শেয়ার বাজার ফের উর্ধ্বমুখী | চিন্তা বাড়াচ্ছে এই 6 কারণ :

শেয়ার বাজার সপ্তাহের শেষে ফের ঊর্ধ্বমুখী সেন্সেক্স ছুঁয়ে নিল ৭৩ হাজারের সাইকোলজিক্যাল লেভেল। কিন্তু বাজারকে দুর্বল করছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

শেয়ার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি :

লোকসভা ইলেকশন যত সামনে এগিয়ে আসছে শেয়ার বাজারের অস্থিরতা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে কোন কোন দিন সেন্সেক্স 1000 পয়েন্ট নিচে নেমে যাচ্ছে আবার কোন কোন দিন এক হাজার পয়েন্ট উপরে উঠতে দেখা যাচ্ছে। শেয়ারবাজার কখনো এক ভাবে উপরে উঠে যায় না বা কখনো একভাবে নিচে নেমে যায় না, উত্থান ও পতনের পিছনে থাকে বেশ কিছু কারণ।

বিগত কয়েকদিন ধরেই বাজারের ট্রেন্ড ছিল নিম্নমুখী Nifty তার অলটাইম হাই থেকে প্রায় 700 পয়েন্টেরও বেশি নিচে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে গত দুই দিনে বেশ কিছুটা রিকভারি দেখিয়েছে। কিন্তু এখনো চিন্তা বাড়াচ্ছে এই কারণগুলো।

শেয়ার বাজার

1. শেয়ার বাজারে জিও পলিটিক্যাল টেনশন :

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি তার মধ্যেই দানা বাঁধলো নতুন আতঙ্ক। গত শুক্রবার ভারতীয় স্টক মার্কেট বন্ধ হওয়ার পরেই রাশিয়ার মস্কোতে টেররিস্ট হামলার খবর পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী এই ঘটনার ফলে একশোরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে সাবধান করে বলেছেন যদি এই ঘটনার পিছনে কোন ইউরোপিয়ান দেশের হাত থাকে তাহলে তারা কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। বারবার তিনি জানিয়েছেন World war 3 এর জন্য তারা পুরোপুরি তৈরি এই খবর আসার পরেই আমেরিকান স্টক মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ ইনডেক্স Dow Jones কে ৩০০ পয়েন্টেরও বেশি নিচে নামতে দেখা যায় যা মঙ্গলবার ভারতীয় শেয়ার বাজার ওপেন হওয়ার পরে শেয়ার বাজারে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলতে পারে।

2. ডলারের দামের বৃদ্ধি ও টাকার দামে পতন:

স্টক মার্কেটে বড়সড় স্বস্তি মিলেছিল যখন ডলারের দাম ৮৩ ডলারের নিচে এসে গেছিল যার ফলে মার্কেট প্রায় অনেকটাই ওপরের দিকে Rally দেখিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করেই ডলারের দাম ৮৩.৪ এ পৌঁছে যায় আর Us Dollar Index একদিনে এক পার্সেন্টেরও বেশি জাম্প করতে দেখা যায় আর যার ফলে Indian Rupee All time Low এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় যা ভারতীয় শেয়ার বাজারের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

3. SEBI এর কিছু কড়া পদক্ষেপ :

স্মল ক্যাপ ও মিডক্যাপ শেয়ার গুলো কত এক বছরে বিনিয়োগকারীদের দুই হাত ভরে রিটার্ন দিয়েছে। প্রায় সমস্ত স্মল ক্যাপ ও মিডক্যাপ শেয়ার গুলোই বর্তমানে অনেক হাই ভ্যালুয়েশনে ট্রেড করতে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে মিডক্যাপ ও স্মল ক্যাপ শেয়ারগুলোর এই হাই ভ্যালুয়েশন নিয়ে SEBI এর চেয়ারম্যান মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলোর ওপর সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে।

শেয়ার

SEBI জানিয়েছেন যে তারা SME সেক্টরে ম্যানুপুলেশনেরও আশঙ্কা জানিয়েছেন তাই মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলোকে ১৫ দিন পর পর Stress Test করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে মিডক্যাপ ও স্মল ক্যাপ শেয়ারগুলোকে দ্রুত নিচে পড়তে দেখা যায়। SEBI এর এই সিদ্ধান্তের ফলে যাদের পোর্টফোলিওতে স্মল ক্যাপ ও মিডক্যাপ শেয়ার কেনা ছিল তাদের পোর্টফোলিও অনেকটাই ডাউন যেতে দেখা যায়। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই প্যানিক সেলিং বা প্রফিট বুকিং করে যা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় শেয়ারবাজার কে অনেকটাই দুর্বল করেছে।

4. IT সেক্টরের খারাপ পারফরম্যান্স এর আশঙ্কা :

ভারতীয় আইটি শেয়ারগুলোর বেশিরভাগই সার্ভিস based IT কোম্পানি। আমেরিকার সার্ভিস Based IT কোম্পানি গুলোর মধ্যে সবথেকে বড় কোম্পানি Accenture Recently খারাপ ফাইনান্সিয়াল রেজাল্ট পেশ করেছে। এবং কোম্পানি বোর্ড মিটিং এ জানিয়েছে IT Service সেক্টর এর ডিমান্ড বর্তমানে কম থাকায় তাদের ফাইন্যান্সিয়াল পারফরমেন্সে ইম্প্যাক্ট ফেলেছে ও ডিমান্ড কম থাকায় আগামী দিনেও তাদের ফাইন্যান্সিয়ালে প্রেসার থাকবে বলে অনুমান করছেন।

এই কারণে আমেরিকার বাজারে ট্রেড হওয়া সমস্ত ভারতীয় IT কোম্পানির ADR গুলোতে নেগেটিভ সেন্টিমেন্ট দেখা যায়। Infosys এর ADR প্রায় আড়াই শতাংশ নিচে ও Wiprow এর ADR চার পার্সেন্ট এর কাছাকাছি নিচে বন্ধ হতে দেখা যায়। যা ভারতীয় শেয়ার বাজার কে মঙ্গলবার দিন প্রেসারে রাখতে পারে।

5. ইনফ্লেশন ডেটা বা মুদ্রাস্ফীতি :

বর্তমানে ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি যা সহজ ভাষায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি শেয়ার বাজার কে দুর্বল করার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মধ্যে একটি। বর্তমানে প্রায় সারা বিশ্বের সমস্ত দেশ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দর নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। ঠিক এই কারণে বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক রেপো রেট কমানোর Confidence পাচ্ছে না সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ জাপান ১৭ বছরে এই প্রথমবার তাদের ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনাদের জেনে রাখা উচিত সারা বিশ্বে একমাত্র জাপান যেখানে ব্যাংকে নেগেটিভ ইন্টারেস্ট রেট রাখা হতো। যেমন ধরুন আপনি ব্যাংকে টাকা রাখলে সেখান থেকে সুদ পান কিন্তু জাপানে তা ছিল না সেখানে ব্যাংকে টাকা রাখলে জনগণকে ইন্টারেস্ট দিতে হতো।

Crude Oil

আমেরিকা ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোর ইনফ্লেশন ডেটা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু তবুও FED তিনবার তাদের ইন্টারেস্ট রেট কমানোর কথা বলেছে যা শেয়ার বাজার কে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছিল। কিন্তু Crude Oil এর দাম আবার ৮০ ডলারেরও ওপরে পৌঁছে গেছে যার ফলে ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা ইকোনোমিকে স্লো ডাউন এর পথে নিয়ে যেতে পারে। RBI ইন্টারেস্ট রেট কমানোর জন্য চার পার্সেন্ট এর নিচের ইনফ্লেশন টার্গেট রেখেছে যা এখনো অ্যাচিভ করতে পারেনি । রিসেন্ট ডাটা অনুসারে ইনফ্লেশন ৫.১০ পার্সেন্ট থেকে কমে ৫.০৯ পার্সেন্টে এসে পৌঁছেছে। মুদ্রাস্ফীতি কমাতে না পারলে আগামী দিনে ভারতীয় শেয়ার বাজার কে বড়সড়ো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।

6. শেয়ার বাজারের ভ্যালুয়েশন ও ব্যাংকিং সেক্টরের খারাপ পারফরমেন্স :

ভারতীয় শেয়ারবাজার বর্তমানে প্রায় All Time High তে ট্রেড করছে শুধু তাই নয় গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডেক্স Nifty ও Sensex এর PE Ratio বর্তমানে 22.8 যা ইঙ্গিত করছে শেয়ার বাজারের ভ্যালুয়েশন অনেকটাই হাই। বিনিয়োগ করার জন্য 15 থেকে 20 এর Price To Earning Ratio আদর্শ বলে মানা হয় এই কারণে বিনিয়োগকারীরা এগ্রেসিভ ভাবে বাজারে বিনিয়োগ করতে কনফিডেন্স পাচ্ছে না।

এবং ব্যাংকিং সেক্টরের কোম্পানিগুলো এক্সপেকটেশনের থেকে খারাপ কোয়ার্টারলি রেজাল্ট পেশ করেছে। তাছাড়া ভারতীয় স্টার্টআপ কোম্পানি Paytm Payment Bank ও IIFL Finance এর ওপর RBI কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টরে আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন SBI এর Electoral Bonds ইত্যাদি শেয়ারবাজারে সেন্টিমেন্টকে খারাপ করেছে, এর ফলে FII দ্বারা ভালো সেলিং প্রেসার বাজারে দেখা যাচ্ছে যা শেয়ারবাজার কে উপরে উঠতে দিচ্ছে না।

(বি.দ্র: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। তাই সূচকের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ কম বা বেশি হতে পারে। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগে লাভের কোনও গ্যারান্টি থাকে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগ করুন।)

Leave a Comment